Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগ কি 

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সাধারণ জ্বর রোগ। এই ভাইরাসটি ডেঙ্গু ভাইরাস নামে পরিচিত, যা অ্যাডেনোভাইরাস গণের অংশ। এই ভাইরাসটি মশা এবং মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ল্যাটিন আমেরিকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। ভারতবর্ষে গ্রীষ্ম ঋতুর পূর্বে এবং বর্ষার সময় ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু সংক্রমণের হার মার্চ থেকে জুন সবচেয়ে বেশি থাকে। 

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ 

মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলোকে ডেঙ্গু জীবাণু আক্রমণ করে। এর ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়। আস্তে আস্তে রক্ত প্রবাহে ক্লট-তৈরির কোষগুলোর (প্ল্যাটলেট) সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। ডেঙ্গু রোগের বেশিরভাগ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং চোখের পাতা লাল হয়ে যাওয়া। ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বর হতে পারে। চোখের পিছনে ব্যথা হতে পারে, আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হতে পারে। 

মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে খুব, বমিভাব কিংবা বমি হতে পারে, রুচি থাকবেনা খাবারে।  অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে: অস্থিরতা, অসাড়তা এবং শরীরের চারপাশে হাড়ের ব্যথা, মুখ এবং শরীরে মারাত্মক পোড়া, ত্বকে লাল দাগ। ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গুর আরও গুরুতর রূপের লক্ষণগুলির মধ্যে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং অচেতনতা সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা যেতে পারে। 

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ  রোগীর শরীরে দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে অথবা নিকটবর্তী হসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় প্রাণ সংকট হতে পারে রোগীর। ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার এ সবচেয়ে ভালো হয় গুরুতর লক্ষণের শুরুতে সতর্ক হওয়া। 


ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে

ডেঙ্গু রোগ কিভাবে ছড়ায় এ বিষয়ে জানা জরুরি। আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে অথবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, এ রোগ ছড়ায় না । অর্থাৎ ডেঙ্গু রোগ ছোঁয়াচে নয়। শুধুমাত্র মশার মাধ্যমেই এই রোগ বিস্তার লাভ করে। ডেঙ্গু একপ্রকার ভাইরাস, যা অ্যাডিস নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাস চার ধরণের হয়। এ ছাড়া অ্যাডিস অ্যালবপটিকাস দিয়েও এ রোগ বিস্তার লাভ করে। অ্যাডিস মশাগুলো অন্যান্য মশার চেয়ে কিছুটা বড় এবং গায়ে ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড় দেওয়ার পর ওই মশাটি যদি আরেকজন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয়, তাহলে সুস্থ ব্যক্তিটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। 

অ্যাডিস মশা সাধারণত বৃষ্টি-পরবর্তী সময়ে যেকোনো জলাবদ্ধ এলাকায় বংশবিস্তার করে। এরা মূলত জমা হওয়া স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে।। ময়লা পানি এদের পছন্দ নয়। শীতকালে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর হয় না, বৃষ্টির বা বর্ষাকালে এই জ্বর বেশি হয়।ডেঙ্গু বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বেশিরভাগ জলবায়ু এবং মশার প্রজনন অবস্থার উপর ভিত্তি করে।

ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার এর জন্য মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকুন। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য, মশারিসহ যথাযথ সুরক্ষা ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু মশা-আক্রান্ত এলাকায় যাওয়ার সময় লম্বা কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখুন যেমন গ্লাভস, মোজা এবং টুপি ইত্যাদি ব্যবহার করুন।  কোনো অংশ যাতে খোলা না থাকে।

কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে নিয়মিত তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।  রোগীদের পর্যাপ্ত পানি পান করতে উত্সাহিত করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে না গিয়ে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিয়ে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরে যেন মশা না থাকেসেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মশার স্প্রে বা বাসার চারদিকে নেট লাগিয়ে রাখা জরুরি ।জ্বর হলে বা গায়ে ব্যথা থাকলে আন্দাজে ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

এসময় তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে প্রচুর। যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন ইত্যাদি। দেশি ফল বিশেষ করে ভিটামিন-সি জাতীয় ফল বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।

আয়রনসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত যেগুলি রক্ত বাড়ায়। বাড়িতে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকা জরুরি। ধ্বংস করতে হবে এডিস মশার আবাসস্থল এবং কোথাও যেন পানি জমে থাকতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।


ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি। অবশ্যই, কোনো একক খাবারই ডেঙ্গু রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে না, তবে স্বাস্থ্যকর এবং উপযুক্ত পুষ্টি প্রদান করা শরীরকে ভালো অবস্থায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

মশা নিরোধক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য কমপক্ষে 10% এন-ডাইথাইল-মেটা-টোলুয়ামাইড সহ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যার ফলে মশা দূরে থাকবে। 

যদি আপনি ক্যাম্পিং করেন বা মশা-আক্রান্ত এলাকায় থাকতে হয় , তাহলে  জামাকাপড়, তাঁবু এবং অন্যান্য জিনিসপত্রে পারমেথ্রিন স্প্রে করতে হবে। পারমেথ্রিন এমন একটি জিনিস যার সংস্পর্শে আসা যে কোনো মশা মরে যায় । 

ঘর-বাড়ির চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, ক্যান, বোতল, নারকেলের মালা ও এ-জাতীয় পানি ধারণ পাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে, যাতে পানি জমতে না পারে।

 পাঁচ দিনের বেশি কোনো অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। পরিস্কার ও স্থবির পানিতে ডেংগুর জীবাণু বেশি বংশ বৃদ্ধি করে। 

ফুলের টবে, ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে ও মাটির পাত্রে সামান্য পানি জমে থাকলে তা-ও ফেলে দিন।

ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখতে হবে কারণ মশা সাধারণত অন্ধকার এবং স্যাতঁস্যাতেঁ স্থান বেশি পছন্দ করে। তাই  ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখাটা জরুরি।

দিনের শেষাংশে এবং ভোরের আলো ফোটার সময় এডিস মশা সক্রিয় হয়ে ওঠে । তাই এই সময় অবশ্যই জানালা দরজা বন্ধ রাখা দরকার।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে সবসময় মশারির মধ্যে রাখুন।

অব্যবহৃত বাথরুমের কমোডও এডিস মশার লার্ভা উৎপাদনের উত্তম জায়গা। তাই এক্ষেএে কয়েকদিন পর পর ফ্ল্যাশ করে দিন কমোড। 

ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তরল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এতে শরীর থেকে চলে যাওয়া পানির শূন্যস্থাণ পূরণ হতে পারে এবং শরীরে তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দ্বিতীয় ধাপে রোগী যখন ডেঙ্গু থেকে উত্তরণের পথে থাকে তখন সহজে হজমযোগ্য খাবার যেমন- সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ শাকসবজি যেমন পেঁপে, কুমড়ো, পোরিজ, খিচুড়ি, দই, ভাত, সবুজ মটর ইত্যাদি খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে।

তৃতীয় ধাপে রোগীকে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবুর রস ব্যবহার ভালো। পাকা কলা, পাকা পেঁপে এবং তরমুজের মতো ফলগুলো দেয়া যেতে পারে। এছাড়া কালো আংগুর,পেয়ারা, ডালিম ইত্যাদি ফল খুব উপকারী।

পালং শাকে আছে ভিটামিন কে,আয়রন, পটাসিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এই খাবারটি প্লাটিলেট বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়। যেহেতু ডেংগু রোগীদের শরীরে পানিশুন্যতা তৈরী হয় তাই ডাবের পানির অনেক উপকারীতা রয়েছে । ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট ও পুষ্টি থাকে যা রোগীকে তাড়াতাড়ি সুস্থ, স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এছাড়া টমেটো স্যুপ,বিটরুটের স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।  

যেসব খাবার খাওয়ানো যাবেনা

তৈলাক্ত, মশলাদার ও ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ানো নিষেধ। কারণ এসব খাবারের ফলে পেটে অ্যাসিড জমতে পারে, যার ফলে আলসার ও অন্যান্য ক্ষতি হতে পারে।ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় দ্রুত হৃদস্পন্দন বাড়ায়। এসব এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।


শেষ কথা 

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এর বিষয়টি সম্পর্কে সকলের জানা দরকার। ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক কোনো রোগ নয় । তবে অবহেলা করলে এই রোগের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। গ্রামের চাইতে শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। তাই শহরবাসীকে সজাগ ও সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে যাদের ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগ হয়েছে তাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। অতএব সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ