কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
কিডনি মানব দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। কিডনি শরীরের বর্জ্য অপসারণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি যদি শরীর ভাল রাখতে চান তবে কিডনির যত্ন নিতে হবে।
কিডনি কোথায় থাকে অনেক মানুষ জানেনা। কিডনি থাকে পিঠের দিকে মেরুদন্ডের দুই পাশে নিচে কোমরের অংশে।
কিডনিতে নেফ্রন নামে একটি ফিল্টার থাকে যা রক্ত থেকে বর্জ্য অপসারণে কাজ করে। বর্জ্যগুলি প্রস্রাবে রূপান্তরিত হয়। এই প্রস্রাব কিডনির শ্রোণীতে জমে এবং তারপরে ইউরেটার এবং মূত্রাশয় নামক একটি নল দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর ও তরলের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে রক্ত পরিশোধন বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি রোগের লক্ষণ কি কি তা জানা আমাদের জন্য জরুরি। কিডনি রোগের বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে।
এইগুলো হল :
বুকের চাপ ও ব্যথা, রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, চোখের চারপাশে ফোলাভাব, পা ফোলাভাব, ঘুমের অভাব, ক্লান্ত বোধ হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে যেতে হবে।
কিডনি রোগের কারণ
রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে রক্তনালীগুলির মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফলস্বরূপ, কিডনিতে নালীগুলি দুর্বল হয়ে যায় এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো হয়ে যায়।
ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে উচ্চ পরিমাণে চিনি থাকে। এটি রক্তনালী এবং কিডনির ফিল্টারগুলির ক্ষতি করে। তারা রক্ত সঠিকভাবে পরিশোধন করতে পারে না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
স্ক্লেরোডার্মা এমন একটি রোগ যার ফলে রক্তনালী এবং সংযোজক টিস্যুগুলি শক্ত হয়ে যায় যা কিডনিকে প্রভাবিত করে। এটি রক্তচাপ বাড়ায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
দীর্ঘক্ষণ মূত্র ধরে রাখার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই দীর্ঘসময় প্রস্রাব ধরে উচিত নয়।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এবং ওষুধ সেবন করে কিডনিকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করে কিডনি রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। এর জন্য নিয়মিত সুগার এবং মূত্রের এলবুমিন পরীক্ষা করা উচিত।
কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা র ক্ষেত্রে কম চর্বিযুক্ত খাবার এবং লবন কম খেতে হবে । প্রচুর পানি পান করা উচিত।
ডায়রিয়া এবং রক্ত-আমাশয়ের কারণে শরীর লবণশূন্য হয়। ফলে কিডনি বিকল হতে পারে। তাই বার বার স্যালাইন খেতে হবে।
ত্বকে চুলকানি হলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে । নতুবা,এটা কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনও ব্যথানাশক ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না।
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা য় একটি পাত্রে কয়েক মুঠো ধনিয়া পাতা পানিতে নিয়ে দশ মিনিট সিদ্ধ করুন। প্রতিদিন এই জল খেলে কিডনি পরিষ্কার হয়।
পেঁয়াজের রস চর্বি কাটতে সাহায্য করে। রসুনে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা কিডনি সুরক্ষায় সহায়তা করে। আপনি যদি প্রতিদিন খালি পেতে রসুন খান তবে হার্ট এবং কিডনি ভাল থাকবে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে আপেলের রস ভাল কাজ করে। নিয়মিত ডিমের সাদা অংশ, বাঁধাকপি, লাল ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
কিডনি রোগীদের খাদ্য তালিকা য় সামুদ্রিক মাছ থাকা উচিত। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর ওমেগা থ্রি ,ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা কিডনি সুরক্ষায় ভাল কাজ করে। তাই খাবার তালিকায় আপনার প্রতিদিন মাছ রাখতে হবে ।
নিয়মিত দারুচিনি সেবন কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়।
কিডনি রোগের ঔষধ কি খেতে হবে তা জানার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আন্দাজে ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কিডনি সুস্থ রাখুন, সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
0 মন্তব্যসমূহ